নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা পরবর্তী বর্তমান কোটা আন্দোলনে চলমান পরিস্থিতিতে বিলাসবহুল পাঁচ-তারকা হোটেল শিল্পে ব্যবসায় ধস। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে দেশি-বিদেশি কোনো পর্যটক আসছেন না তারকা হোটেলে; আসছেন না বিদেশি পর্যটকরাও।
বিদ্যমান সমস্যার জন্য বিদেশি অতিথিদের বুকিং বাতিলের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন ইভেন্ট ও অনুষ্ঠানও হচ্ছে না; বরং আগে করা বুকিং বাতিল হচ্ছে। অথচ ব্যয়ের খাত খোলা রয়েছে। অর্থাৎ আয় বন্ধের মধ্যেই ইউটিলিটি বিল, স্টাফদের বেতন ও ব্যাংকঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের। ফলে প্রতিদিন শতকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যবসা বন্ধ থাকায় সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, এ খাতের অবস্থাও ততই বেহাল হবে।
বর্তমানে তারকা হোটেলগুলো প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। একের পর এক বাতিল হচ্ছে রুম ও অনুষ্ঠানের আগাম বুকিং। এমনকি এসব হোটেলে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মতো কর্পোরেট ইভেন্টগুলোও এখন বন্ধ আছে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) তথ্য বলছে, তারকা হোটেলগুলোতে অতিথি কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। আর রুম বুকিং নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারসহ সারাদেশে বিলাসবহুল হোটেলগুলোর চলতি জুলাই মাসের বাকি দিনগুলো ও আগস্টের কিছু দিনের জন্য রুম বুকিং বাতিল করেছেন অতিথিরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ বিদেশি অতিথিরা যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি তারা হোটেল বুকিং, বাতিল কিছুই করতে পারেননি। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক সফরও স্থগিত করে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
হোটেল সী পার্ল বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পা'র কোম্পানি সেক্রেটারি আজহারুল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, কোটা আন্দোলনের আগে আমাদের বুকিং খুবই ভালো ছিল। কিন্তু এখন তা ১-২ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে প্রতিদিন ৪৭০ রুম বুকিং থাকতো তা এখন ৫-১০ রুমে নেমে এসেছে। এর ফলে ব্যবসায় বড় লোকসান গুণতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের অগ্রিম অনেক বুকিং ছিল তার মধ্যে অধিকাংশ ক্যান্সেল করে দিয়েছে। কিছু বুকিং হোল্ড আছে এখন গ্রাহক কিছু জানায়নি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসার গতি হারাবে এ খাত।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে তারকা হোটেলের ব্যবসা নেই বললেই চলে। প্রায় হোটেলই অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করায় বিদেশি অতিথিরা আসছেন না। পাশাপাশি দেশি অতিথিরাও আসছেন না। তদুপরি পার্টি ও অনুষ্ঠান ইত্যাদিও হচ্ছে না। নতুন করে বুকিংও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে তারকা হোটেল শিল্প ঝিমিয়ে পড়েছে।
তারা বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইউটিলিটি ব্যয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্টাফদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় থেমে নেই। ব্যাংকঋণের সুদও চলমান রয়েছে। এমন অস্থিরতা চলতে থাকলে স্টাফদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
চলমান পরিস্থিতিতে তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি পাঁচ-তারকা হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তার হোটেলে প্রতিদিন কোটি টাকার ওপর ব্যবসা হয়। কিন্তু গেল কয়েক দিনে এক লাখ টাকারও ব্যবসা হয়নি। তিনি বলেন, এখন কেবল বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কিছু কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ হোটেলে অবস্থান করছেন।
রাজধানীর চার তারকা মানের এক হোটেলের কর্মকর্তা জানান, কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কারফিউর কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল। এ কারণে অতিথিরাও আসছেন না। হোটেলের সব রুম ফাঁকা পড়ে আছে। এ ছাড়া নেই কোনো অনুষ্ঠান। ফলে খাবারও বিক্রি হচ্ছে না।
জানা গেছে, দেশে ৫৫টি নিবন্ধিত বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে। তারকা রেটিং ছাড়াই প্রায় ২ হাজার বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে। এই শিল্প বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় এক লাখ লোককে নিয়োগ করছে, যা জাতীয় জিডিপিতে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে।