নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের ২১টি বাচ্চা মহিষের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাটে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি খামার পরিদর্শন করে এবং খামারের কর্মচারীদের কাছ থেকে মহিষের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করে। কমিটি মাটি চাপা দেয়া স্থান খুঁড়ে মহিষের বাচ্চাদের দেহাবশেষও পর্যবেক্ষণ করে।
জানা যায়, দেশের দুধের চাহিদা মেটাতে ২০২৩ সালে ভারত থেকে তিন দফায় ১৪৯টি পূর্ণবয়স্ক মহিষ ও ১২০টি বাচ্চা মহিষ আনা হয় বাগেরহাটের ওই খামারে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে ২১টি বাচ্চা মহিষ মারা যায়। এর মধ্যে ১০টি ভারত থেকে আনা এবং ১১টি খামারে জন্মানো। মহিষের বাচ্চাগুলোর মৃত্যুর কারণ জানতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালককে চিঠি পাঠায়। চিঠির উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান, কমিটির সদস্যদের নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় মাটি চাপা দেয়া স্থান খুঁড়ে মহিষের বাচ্চাগুলোর হাড়গোড় পর্যবেক্ষণ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা অলীপ দাস বলেন, ‘দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে দায়িত্ব অবহেলার কারণে মহিষের বাচ্চাগুলো মারা গেছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ না থাকা বিষয়টি হাস্যকর। আমরা চাই খামারটি সঠিকভাবে পরিচালিত হোক এবং এ ব্যাপারে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
অনেকের মতে, খামারে উপযুক্ত তদারকি ও ব্যবস্থাপনার অভাবে মহিষের বাচ্চাগুলোর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খামারটি যাতে কার্যকরভাবে পরিচালিত হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব অবহেলা ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে খামারটি মুখথুবড়ে পড়েছে, সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. আহসান উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ভারত থেকে দীর্ঘ সড়ক পথে ৭ দিন সময় লেগেছে খামারে পৌঁছাতে। এ কারণে কিছু মহিষের বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়ে ও শীতের প্রকোপে সেগুলো মারা গেছে। এখানে কোনো অবহেলা হয়নি বলে জানান খামারের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, খামারের ভিতরে মাটিচাপা দেয়া মৃত মহিষের বেশ কয়েকটি দেহাবশেষ পর্যবেক্ষণ করা হয়। খামারে কর্মচারীদের কাছ থেকে মহিষের মৃত্যু সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য নেয়া হয়। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।
বর্তমানে বাগেরহাটের ফকিরহাটে মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে ৪৭০টি মহিষ রয়েছে।