নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে তিনজন, রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী এবং রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে বেলা তিনটার দিকে নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর বয়স ২৪। তাঁর পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ফারুকের বুকে গুলি লাগে। আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন।
নিহত আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদ নিহত হন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতদের একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী। আরেকজন পথচারী। কলেজ শিক্ষার্থীর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে আমরা মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। তবে পুলিশ কোথাও বলপ্রয়োগ করেনি।
এদিকে মঙ্গলবার ( ১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হন।
নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। অনেক পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছেন। একজন মারা গেছে বলে শুনেছি তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা বলতে পারছি না।
‘নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন’
রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীর শরীর গুলিবিদ্ধ এবং দেহে ছররা গুলির অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে টেলিফোনে এই তথ্য জানিয়েছেন বেরোবির বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।
তিনি বলেন, আবু সাঈদ কোটা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনে বেরোবি ক্যাম্পাসের সমন্বয়কদের একজন ছিলেন তিনি। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা তার মরদেহ হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে বেরোবি ক্যাম্পাসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ওই শিক্ষার্থী নিহত হন।
ঢাকায় যুবক নিহত
অপরদিকে রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা এক যুবক (২৫) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে এক পথচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই পথচারীরা তার নাম পরিচয় বলতে পারেননি।
অজ্ঞাত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী আকাশ মামুদ বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে পেট্রোল পাম্পের সামনে পড়ে থাকতে দেখি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক জানান তিনি আর বেঁচে নেই। প্রাথমিকভাবে আমরা ওই যুবকের নাম পরিচয় জানতে পারেনি। তার ঘাড়ে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।