কক্সবাজার সংবাদদাতা:
কক্সবাজারে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণে ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে চারবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এ ঘটনাগুলোতে নারী-শিশুসহ চারজনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এদের মাঝে দুজন বৃহস্পতিবার সকালে, একজন দুপুরে এবং অপরজন রাতে পৃথক ঘটনায় মাটিচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আতাউল গনি ওসমানী।
সর্বশেষ পাহাড় ধসের ঘটনায় কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকত পাড়া এলাকা থেকে এক স্কুল ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে ৮টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে একজনের মরদেহ এবং বাকি তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
নিহত শিক্ষার্থী মিম (১২) সৈকত পাড়ার মুহাম্মদ সেলিমের কন্যা। সে সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার দোলন আচার্য বলেন, পাহাড় ধসের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পাহাড়ের নিচে বিপদজনকভাবে তৈরি করা একটি ঘরের ছোট খুপরিতে মাটিচাপা পড়েন কয়েকজন। সেখানে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। মিমকে বের করতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের বরাতে পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ মনজুর বলেন, পরমাণু শক্তি কমিশন অফিসের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ সেলিমের মালিকানাধীন টিন সেট বাড়ির উপর রাত ৮টার দিকে একটি গাছসহ পাহাড় ধসে পড়ে। এসম সময় বাড়িতে সাত সদস্য অবস্থান করলেও সেলিমের স্ত্রী নূরজাহান, তাদের সন্তান লামিয়া হাবিবা, হুজাইফা, মাওয়া ও মিম মাটির নিচে চাপা পড়ে। তাৎক্ষণিক চেষ্টাও তিনজনকে জীবিত বের করা গেলেও মিমকে উদ্ধারে সময় বেশি লাগায় তার মৃত্যু হয়। প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্ধারে অংশ নেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরিপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে গৃহবধূ লায়লা বেগম (৩৫) নিহত হন। তিনি স্থানীয় বজল আহমদের স্ত্রী। তাদের শিশু সন্তান মোহাম্মদ জুনায়েদকে (২) গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের মেয়ে ইয়াছমিন আক্তার বলেন, আমার মা ভাইকে নিয়ে দুপুরে ভাত খাচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ পাহাড় ধসে এসে রান্নাঘরে পড়ে। মা এবং ভাই মাটি চাপা পড়লে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের ভেতর থেকে বের করা হয়। পরে আমার মা মারা গেলেও ভাইকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
একইদিন সকাল ৭টার দিকে পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় আরো দুইজনের মৃত্যু হয়। শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পল্যানিয়া কাটা এলাকায় বসতঘরে পাহাড় ধসে স্থানীয় মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা বেগম (৩০) নিহত হন৷ কাছাকাছি সময়ে শহরের ৭নং ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকায় বাড়ির মাটির দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় সাইফুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাছান (১০)।
নিহত জমিলার স্বামী করিম জানান, সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সপরিবার। এসময় আচমকা পাহাড়ের কাদামাটি বসত ঘরে পড়লে চাপা পড়েন গৃহবধূ জমিলা। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শিশু হাসানের পরিবার জানায়, পাহাড় ধসে ঘরের মাটির দেয়ালে পড়লে মাটির দেয়ালসহ আসবাবপত্রে চাপা পড়ে শিশু হাসান। ঘটনাস্থল থেকে তাকে মৃত উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম তারিকুল আলম বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকারা নিরাপদে সরে আসতে কক্সবাজার পৌরসভা ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। সেখানে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের পাহাড়ে বসবাসরতদের মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। এ কারণেই বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেলো।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, যুগ যুগ ধরেই কক্সবাজারের পাহাড় ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গেড়েছে অধিবাসীরা। মৃত্যুর হাতছানি দেখেও তাদের সরানো যায় না। এরপরও মাইকিং অব্যাহত রাখা হয়েছে। পাহাড় ধসে মৃত্যুরোধে প্রয়োজনে আইনী পদক্ষেপে তাদের সরানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলেও উল্লেখ করেন এডিএম।