নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন সরকার সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কোটাবিষয়ক আন্দোলনে ছাত্রলীগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কোনো উস্কানি না দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল বাংলাদেশে। তার মাঝে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি কোটার মাঝে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।
ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল যে কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের দাবির মুখে সে বছর পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাবার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং গত পাঁচই জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। তারপর হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সকালে কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেনি আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের পর গত ৬ জুন থেকেই তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। মাঝে কিছুদিন আন্দোলন চললেও ঈদুল আজহার কারণে ২৯ জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ৩০ জুন থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।
অন্যদিকে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসগুলো অচল হয়ে পড়েছে।
সরকার এসব আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা বাতিলের আন্দোলন চলছে। পাশাপাশি পেনশনের বিষয়ে শিক্ষকরা একটা আন্দোলন ও কর্মসূচি পালন করছেন। এই দুটি কর্মসূচি আমরা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোটাবিষয়ক আন্দোলনে ছাত্রলীগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কোনো উস্কানি না দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, শোকের মাস আগস্ট আবারও ফিরে আসছে। ১ আগস্ট থেকে আমাদের মাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে এই মাসের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। ঢাকায় যারা কর্মসূচি নেবেন তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে করবেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ ও উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।