নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলতি মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ভারী বৃষ্টিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে আবার বন্যা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও অব্যাহত রয়েছে ভারী বর্ষণ। ফলে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবার প্লাবিত হয়েছে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা। তলিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাও।
এদিকে আজ থেকে শুরু হওয়া জুলাই মাস পুরোটাজুড়েই বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে জুলাই মাসে। এছাড়া দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে জুলাই মাস পুরোটাজুড়েই বৃষ্টি ও বন্যার ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে লোভা ও ডাউকি নদীর পানি খরস্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে সিলেটে ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়া অধিদফতর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল (সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা) ৩৯.৬ মিলিমিটার। শুধু আজ সকাল ৬ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আর বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চেরাপুঞ্জিতেও গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগের দিন ৩০ জুন চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৮৬ মিলিমিটার। যে কারণে পাহাড়ি নদীগুলো দিয়ে ঢলের পানি নেমে আসছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)তথ্য মতে, সোমবার (১ জুলাই) শনিবার সকালে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্যা ৬টায় বেড়ে ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। আর নতুন করে সুরমার নদীর পানি সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে ফের বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং একই সময়ে সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্য ৬টায় বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সারি নদীর পানি সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সোমবার (১ জুলাই) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, জুলাইয়ে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এছাড়া দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ৩-৪ দিন বিজলিসহ মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। সারাদেশে ৫-৬ দিন বিজলিসহ হালকা বজ্রঝড় হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েক দিন বেশ কিছু নদীর পানি বাড়বে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সাময়িকভাবে বেড়ে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এই পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়েও যেতে পারে। সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ দিন সময় লাগতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবারের বর্ষায় বৃষ্টি বেশি হবে এমন পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়েছিল। জুনে বেশ ভালোই বৃষ্টি হয়েছে। জুলাই মাসের প্রায় পুরো সময়জুড়ে সারাদেশে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলতে পারে।